গাজীপুরে ৯৯টি অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ

গাজীপুরে গত তিনদিনে মোট ৯৯টি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়েছে। এর অনেকগুলোকেই বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি জরিমানাও করা হয়েছে। সাধারণ জনগণ সরকারি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও অনেকের মধ্যেই প্রশাসনিক এই তৎপরতার পর বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বন্ধ রাখার দেশের মধ্যে পড়ো খোলা রাখা হচ্ছে কোন কোন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আবার বাইরে তালা লাগিয়ে ভেতরে কাজ করার চিত্র পাওয়া গেছে। গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার মো: খায়রুজ্জামান জানান, স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা উপজেলা ও প্রশাসনের মোট ১৪টি টিম ৩ দিন অভিযান চালিয়ে গাজীপুর মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলা এলাকার মোট ৯৯টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মাত্র তিন দিনে স্বল্প সংখ্যক লোকবল নিয়ে সবগুলি অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। তালিকায় আরও ৫৭ টি অবৈধ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৭২ ঘণ্টার মধ্যে অনিবন্ধিত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ

আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের অনিবন্ধিত সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ বৃহস্পতিবার (২৬ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবিরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করেছে, কিন্তু নবায়ন করেনি, তাদের নিবন্ধন নবায়নের জন্য একটি সময়সীমা দিতে হবে।

নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নবায়ন গ্রহণ না করলে সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে অপারেশন করার সময় অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া ও ওটি অ্যাসিস্ট করার ক্ষেত্রে নিবন্ধিত ডাক্তার ছাড়া অন্যদের রাখা হলে সেসব প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন নিবন্ধনের আবেদন করেছে, তাদের লাইসেন্স দেওয়ার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্তির আগে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

শস্যকণায় ক্যান্সার উপাদান ও সবজিতে ব্যাকটেরিয়া

দেশে উৎপাদিত চাল, বাদাম আর ভুট্টার কিছু নমুনায় মিলেছে ক্যান্সারের জন্য দায়ী উপাদান। সম্প্রতি পাঁচটি আলাদা গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য।

বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের এক কর্মশালায় এই তথ্য জানানো হয়। ডাচ সরকারের অর্থায়নে ‘অরেঞ্জ নলেজ’ প্রকল্পের অধীনে এসব গবেষণা করেছেন বাংলাদেশের গবেষকেরা।

দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা চাল, ভুট্টা ও বাদামের ৬০টি নমুনার মধ্যে ৯টিতেই লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী ক্ষতিকর উপাদান ‘অ্যাফ্লাটক্সিন’ এর উপস্থিতি মিলেছে। ভুট্টা আর বাদামেই এই বিষাক্ত উপাদানটির উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।

গবেষক অধ্যাপক তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তাদের গবেষণায় ২০২১ সালে আমদানি করা এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ৯টি শস্য ও পণ্য নিয়ে কাজ করেছেন তারা। চাল, ভুট্টা, বাদাম ছাড়াও আটা, মসুর ডাল, মুগ ডাল ও সরিষা নিয়ে গবেষণাটি করা হয়।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর ও নাটোরসহ মোট ৯টি জেলার পাইকারি ও খুচরা বাজার থেকে মোট ৬০ টি নমুনা সংগ্রহ করেন তারা। যার মধ্যে ৯টি নমুনা অর্থাৎ ১৫ শতাংশ শস্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান মিলেছে।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষক অধ্যাপক তাজুল ইসলাম জানান, যে ৯টি নমুনায় অ্যফ্লাটক্সিন পাওয়া গেছে তার মধ্যে চারটিতেই নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়েও সেটি বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে। যা শরীরে ক্যান্সার এবং কিডনি জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়াও তাদের আলাদা গবেষণায় উঠে এসেছে শসা, টমেটোর মত সালাদ তৈরির সবজি এবং দুগ্ধজাত খাবারে লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিস নামের আরেকটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ধরা পড়েছে।

শসা, টমেটো ও গাজরের ৮৫ নমুনা এবং আইসক্রিম, দই ও পনিরের ৮৩ নমুনা নিয়ে গবেষণা চালান তারা। ময়মনসিংহ, ফুলবাড়িয়া এবং ঈশ্বরদী জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয় এসব নমুনা।

গবেষণায় দেখা যায়, নমুনার ১৯ শতাংশ শসা, ১০ শতাংশ টমেটো এবং ৩ শতাংশ গাজরে এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। আর আইসক্রিমের ৭ শতাংশ এবং দইয়ের ৪ শতাংশ নমুনায় লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিসের উপস্থিতি রয়েছে।

খাদ্যপণ্যে এমন ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণ হিসেবে মল-মূত্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতি এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করছেন গবেষকেরা।

এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে ডায়রিয়া, আমাশয়ের মত রোগ থেকে শুরু করে নারীদের বন্ধ্যত্ব পর্যন্ত হতে পারে বলে জানান তারা।

এছাড়ারও আলাদা এক গবেষণায়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে সংগ্রহ করা লইট্টা মাছের শুঁটকির নমুনার ৫.৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রেও এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা এই গবেষণা করেছেন। গবেষক অধ্যাপক শাহেদ রেজা জানান, সংগ্রহ করা ৪৫টি নমুনার ৫.৩৫ শতাংশ নমুনায় লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিস এবং ৬.২৬ শতাংশ নমুনায় ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, এসব শুঁটকি ভালো করে না ধুয়ে কিংবা উচ্চতাপে রান্না না করা হলে ডায়রিয়া, কলেরা তো বটেই এমনকি শরীরে অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণের মত ঘটনা ঘটাতে পারে।

এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ পরিচালিত এক গবেষণায় বিভিন্ন খামার থেকে সংগ্রহ করা দুধের নমুনায় এমোক্সিলিন এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি মিলেছে।

মানিকগঞ্জ এবং মুন্সীগঞ্জের খুচরা বিক্রেতা এবং সিরাজগঞ্জ ও পাবনার খামার থেকে সংগ্রহ করা ২০০ টি নমুনার মধ্যে ছয়টি নমুনায় এই এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

মূলত গাভীর বিভিন্ন প্রদাহের চিকিৎসায় এসব এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা পরবর্তীতে দুধ এবং দুধজাত খাবারে প্রবেশ করছে। গবেষকরা বলছেন, এসব এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিষয়ে খামারিদের সচেতনতার অভাবের কারণেই এমনটা হচ্ছে।

পঞ্চম গবেষণায় দেশের পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে ক্ষতিকর উপাদান খুঁজতে পরীক্ষা চালান গবেষকেরা। মংলার পশুর নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা কাদামাটি, পানি এবং ১০ প্রজাতির মাছের ওপর গবেষণা চালান তারা।

এর মধ্যে পানি ও মাটির কিছু নমুনায় মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক, সিসা ও ক্রোমিয়ামের মত উপাদান মিলেছে। মাছের মধ্যেও এসব ভারী পদার্থের উপস্থিতি মিললেও তা নির্ধারিত ক্ষমতার চেয়ে কম তাই এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন না গবেষকেরা।

তবে কাদামাটি বা পানিতে থাকা এসব ভারী ধাতু যে কোন সময় মাছ কিংবা সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তারা।

দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই অসংক্রামক রোগে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রতিবছর দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই অসংক্রামক রোগে মারা যান। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) বিকেলে এক সায়েন্টিফিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রতিবছর ১০ লাখ মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। তার মধ্যে ৭০ শতাংশই মারা যায় বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে। অসংক্রামক রোগে প্রতিদিন ১ হাজার ৯০০ মানুষ মারা যান। ভালো চিকিৎসা সেবা দিতে গেলে গবেষণা দরকার। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে অসংক্রামক রোগ বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, দূষণও মৃত্যুর বড় কারণ। এর কারণেই নন কমিউনিকেবল রোগগুলো বেড়ে যায়। লাইফস্টাইল ও খাদ্যভ্যাসও এর জন্য দায়ী। মোবাইল ও স্কিন বেশি দেখার কারণে মানসিক সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। এটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। পাশাপাশি আত্মহত্যাও এসব কারণে বাড়ছে। মানসিক স্বাস্থ্য পলিসি কেবিনেটে পাস হয়েছে। যেদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভালো নয় সে দেশের কাঠামো সুন্দর হয়না।